ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‌দুর্নীতির সুযোগ কমাতে মাঠ পর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তাদের ‘বিবেচনামূলক ক্ষমতা’ কমিয়ে পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি)’র আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ভূমি সেবাদানকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সুযোগ বহুলাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া ১৬১২২ সেবায় নামজারির আবেদনের সুবিধা শিগগিরই চালু করা হবে।
 
আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় জনঅংশগ্রহণ ও সুশাসন’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
 
ভূমিসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় ৩১টি দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় আজ তা বাস্তবায়ন করছে।
 
এ সময় ভূমিসচিব আরো জানান, বাংলাদেশের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সুবিধার্থে ১৬১২২ নম্বরে ফোনযোগে খতিয়ান (পর্চা) ও জমির ম্যাপের আবেদন এবং ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের সুবিধার মতোই ফোনযোগে নামজারির আবেদনের সুযোগও তৈরি করা হচ্ছে। এতে ডিজিটাল ভূমিসেবা গ্রহণে স্মার্ট ফোন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজনও নেই। এ ছাড়া জমির যেসব দলিলাদি ইতোমধ্যে সরকারি অফিসে আছে এ পদ্ধতিতে তাও আলাদা করে আর জমা দিতে হবে না। এতে নামজারি করা আরো সহজ হবে।
 
ভূমিসচিব বলেন, ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি প্রায় শেষ এবং মতামতের জন্য শীঘ্রই তা উন্মুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিন জানান।
 
একটি প্রশ্নের জবাবে ভূমিসচিব জানান, সরকারি নীতির কারণে ভূমিসেবা হটলাইন ১৬১২২ এখনই টোল-ফ্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা ভূমি বিষয়টি জরুরি সংকটময় সেবার অন্তর্ভুক্ত নয়।
 
উল্লেখ্য, যেকোনো গৃহীতব্য সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনি কাঠামোর মধ্যে যেকোনো সিদ্ধান্ত প্রদানের অবাধ স্বাধীনতার ক্ষমতাকে বিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary Power) বলা হয়। অর্থাৎ একের অধিক আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে থেকে যেকোনো একটি, যা সিদ্ধান্ত প্রদানকারীর নিকট সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে হয়, সেটি বাছাই করার ক্ষমতাই ‘বিবেচনামূলক ক্ষমতা’। অনেক অসাধু কর্মকর্তারা তাদের এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে দুর্নীতি করেন। অন্যদিকে, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি)/(Standard Operating Procedure – SOP) হচ্ছে কোনও বিষয়ে সংকলিত ও লিখিত প্রতিটি ধাপের নির্দেশাবলী। সব ধরণের বাস্তব দৃশ্যকল্পের কথা বিবেচনা করে এই নির্দেশাবলি তৈরি করা হয়। কেউ নিজ ইচ্ছেমতাে আর সিদ্ধান্ত দিতে পারে না যদি এসওপি থাকে।
 
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিরোধী দল হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বিতার্কিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফিসহ অন্যান্য সনদপত্র বিতরণ করেন ভূমিসচিব।
 
ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার, জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক বি এম জাহাঙ্গীর এবং আলমগীর স্বপন। অনুষ্ঠানের সভাপতি এ সময় মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।